সংবাদ শিরোনাম

বন্যা বাসী মানুষের হাহাকারের মধ্যেও আ.লীগ পরে আছে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে : রুহুল কবির রিজভীAlo is behind the judgment of the Supreme Court in the woes of flood victims: Ruhul Kabir Rizvi



বন্যা বাসী  মানুষের হাহাকারের মধ্যেও আ.লীগ পরে আছে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে : রুহুল কবির রিজভী/Alo is behind the judgment of the Supreme Court in the woes of flood victims: Ruhul Kabir Rizvi



'সরকারের খাদ্যের গোডাউন শুণ্য। বানভাসীরা না পাচ্ছে আশ্রয়, না পাচ্ছে ত্রাণ। চারিদিকে খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাবে বানভাসীরা হাহাকার করছে। দেশের অধিকাংশ জেলা বন্যায় ডুবছে আর আওয়ামী নেতারা সুপ্রীম কোর্টের রায় নিয়ে অশ্রাব্য ধারাবর্ষণ করছেন। পানিবন্দী লাখ লাখ অসহায় মানুষের সঙ্গে যেন আওয়ামী লীগ উপহাস করছে' বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনের সম্পূর্ণ বক্তব্য নিম্নরূপ।
সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।
বন্ধুরা,
বন্যায় ভাসছে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল। ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে ডুবে যাচ্ছে একের পর এক এলাকা। যমুনার পানি বৃদ্ধি সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ২৭টি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দিনাজপুরে রেলপথ ও মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ এবং ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রামের টগরাই হাট এলাকার বড় পুলের পাড় সংলগ্ন রেলসেতু ধ্বসে যাওয়ায় সারাদেশের সঙ্গে কুড়িগ্রামের রেল যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া লালমনিরহাট, দিনাজপুর, নওগাঁ, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জে ব্যাহত হয়েছে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ। কয়েকটি জেলায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় হু-হু করে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বন্যায় তিন দিনে নারী শিশুসহ ৫৮ জনের প্রাণহানি ঘটল। গণমাধমের খবর-দু’দিনের মধ্যে ১শ’ বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারে যমুনার পানি বৃদ্ধি। বানের পানি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ধেয়ে আসছে ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলের দিকে। এতে বন্যার প্রভাব পড়তে পারে রাজধানী ঢাকাতেও। শুধু তাই নয় হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট , নেত্রকোণাসহ আরও কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বানের পানিতে হাজার হাজার নারী শিশু ও সাধারণ মানুষ ডুবে যাচ্ছে, লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা, আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেই, খাবার নেই, আবার কোথাও কোথাও আশ্রয়ও ডুবে যাচ্ছে, অনেক মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে অথচ আওয়ামী লীগের নেতারা বন্যাদূর্গতদের পাশে না দাঁড়িয়ে গণভবন-বঙ্গভবনে দৌড়ঝাঁপ করছেন। দায়সারা একটি প্রেস রিলিজ দিয়ে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নিজেদের দায়িত্ব শেষ করছেন।
গতকাল ত্রাণমন্ত্রী বলেছেন, দেশে খাদ্যের কোন অভাব নেই। অথচ সরকারের খাদ্যের গোডাউন শুণ্য। বানভাসীরা না পাচ্ছে আশ্রয়, না পাচ্ছে ত্রাণ। চারিদিকে খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাবে বানভাসীরা হাহাকার করছে। দেশের অধিকাংশ জেলা বন্যায় ডুবছে আর আওয়ামী নেতারা সুপ্রীম কোর্টের রায় নিয়ে অশ্রাব্য ধারাবর্ষণ করছেন। পানিবন্দী লাখ লাখ অসহায় মানুষের সঙ্গে যেন আওয়ামী লীগ উপহাস করছে। মূলত: এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিক থেকে দেশবাসীর দেশবাসীর দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার জন্যই তারা মূল সমস্যার বাইরে কথা বলছেন। বানবাসী মানুষের জন্য যেন সরকারের কিছুই করণীয় নেই। কারণ তারা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। তাই জনগণের প্রতি তাদের দরদ থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।
আমি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীসহ দেশের সকল বিত্তবানদের বন্যাদূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আবারও আহবান জানাচ্ছি। আপনারা ডুবন্ত অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ান, তাদেরকে বাঁচান।
সাংবাদিক বন্ধুরা,
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অলিম্পিক প্রতিযোগিতার ন্যায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক শুধু উদ্বেগের নয় ন্যায়বিচারের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার অশুভ অপচেষ্টারই অংশ। আওয়ামী লীগ যেভাবে জোর করে রায় পাল্টিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তা বিচারবিভাগের স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপের সামিল। আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে ম্যানুফ্যাকচার্ড জনমত তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি দলীয় এমপি’দের দ্বারা নির্বাচিত হলেও নির্বাচিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি প্রতিষ্ঠানটি একটা স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভ করে এবং তিনি তখন রাষ্ট্রের অভিভাবকে পরিণত হন, আওয়ামী লীগের নন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বৈঠক হতেই পারে, কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক কিভাবে সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন ? তাহলে আওয়ামী লীগ সরকার কী তাদের ক্ষোভ প্রশমিত করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ব্যবহার করছেন ? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাদের দলের সিদ্ধান্ত তাঁকে জানাতে যাওয়া ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করা, এটি রায়ে পরিবর্তন আনতে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে জনগণের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর নির্বাহী বিভাগের নগ্ন হস্তক্ষেপ। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে বিচারপতিদের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন, আবার বৈঠক করছেন, এটাকে দেশবাসী স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করেন না। তারা বিচার ভিাগকে বিতর্কিত করতে নিজেদের ঘুম হারাম করে ফেলেছেন। এটি শুভ লক্ষণ নয়। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশের পর রায় সংশোধন করতে আওয়ামী লীগের বলপ্রয়োগের দৃশ্য জনগণ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করবে না। একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জন্য স্বাধীনভাবে জনগণের ভোটের মাধ্যমে পার্লামেন্ট গঠন সম্ভব হয়নি। এদেশে আর একক কর্তৃত্ববাদী শাসন, গণতন্ত্র হরণ আর বিরোধী দল ও মত নিধন চলতে দেয়া হবে না। আর ভোটারবিহীন বর্তমান পার্লামেন্ট ও সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের উচ্চারণ কখনোই থামবে না।
এখন আমি কয়েকটি ভিন্ন বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই-
১। আগামী ২০ আগষ্ট ২০১৭, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলাধীন কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার পর সরকার কর্তৃক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়েছে। নির্বাচনের পূর্ব মূহুর্তে একজন সরকারী কর্মকর্তাকে বদলী এটি সম্পূর্ণরুপে আইনের বরখেলাপ এবং ভোট কারচুপির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই তা করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডার’রা প্রতিপক্ষের পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলছে। পুলিশ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্য এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডার’রা প্রতিদিন বিরোধী নেতাকর্মীদের বাড়ীতে বাড়ীতে হামলা চালাচ্ছে, ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাচনের পূর্বমূহুর্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলী এবং নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তান্ডবের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
২। গতকাল ময়মনসিংহ থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ময়মনসিংহ জেলাধীন গফরগাঁও উপজেলার টেংগাবর ইউনিয়নে গত ১৩ আগষ্ট ২০১৭ বিএনপি’র সদস্য পদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চলাকালে ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আমান মেম্বারকে না পেয়ে তার ছেলে ইব্রাহিমকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া গফরগাঁও পৌর কৃষক দলের সভাপতি নাসির উদ্দিন এবং গফরগাঁও পৌর শ্রমিক দলের যুগ্ম আহবায়ক মো: শহীদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য পদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চলার সময় গত ১২ আগষ্ট ২০১৭, ফেনী পৌরসভার বিরিঞ্চি এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতা আবুল কালাম, মাদু মিয়া, মো: দুলাল এবং সামছু চেয়ারম্যানের বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। ফেনী সদর উপজেলাধীন ধর্মপুর ইউনিয়নের মজলিসপুর বাজারে ছাত্রদল নেতা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে আহত করে এবং সদস্য সংগ্রহ বই কেড়ে নিয়ে যায়। সারাদেশেই এভাবে বিএনপি’র যেকোন শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে সরকারের মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনী ও আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তা পন্ড করে দিচ্ছে। দেশব্যাপী বিএনপি’র সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের সাফল্যে ইর্ষান্বিত হয়ে সরকার ধারাবাহিকভাবে বিএনপি’র অনুষ্ঠানগুলোতে হামলা চালাচ্ছে, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে কারান্তরীণের মাধ্যমে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনিকে গ্রেফতারের এবং ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের টেংগাবর ইউনিয়ন ও ফেনীতে বিএনপি’র সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশী ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত ছাত্রদল নেতা জসিম উদ্দিন জনি এবং আমান মেম্বারের ছেলে ইব্রাহিম, কৃষক দল নেতা নাসির উদ্দিন এবং শ্রমিকদল নেতা মো: শহীদকে নি:শর্ত মুক্তি দেয়ার জোর দাবী করছি।

No comments